Śrī Śrīmad Bhaktivedānta Nārāyana Gosvāmī Mahāraja  •  100th Anniversary

Pujyapad B.J. Acharya Maharaja

India

শততম নমন

নিত্যলীলাপ্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ অষ্টোত্তরশত শ্রীশ্রীমদ্ ভক্তিবেদান্ত নারায়ন গোস্বামী মহারাজের শততম আবির্ভাব মহোৎসবে এ দীনের শততম প্রণাম নিবেদন। শ্রীল ভক্তিবেদান্ত নারায়ন গোস্বামী মহারাজের পূর্বাশ্রমের পরিচয় আমার জানা নাই। তিনি প্রথম জীবনে একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। বর্তমান বিহারের সাহেবগঞ্জে কর্মরত অবস্থায় অবস্থিত ছিলেন। আমার শ্রীগুরুদেব নিত্যলীলাপ্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ অষ্টোত্তরশত শ্রীশ্রীমদ্ ভক্তিকমল মধুসূদন গোস্বামী মহারাজ, তিনি গৌড়ীয় বেদান্ত সমিতির একজন প্রচারক ছিলেন। প্রচারে বাহির হইয়া বিহারের সাহেবগঞ্জে কহল গাঁয়ে প্রচার করিতে ছিলেন। ঠিক সেই সময় শ্রীল নারায়ন গোস্বামী মহারাজ পুলিশের কর্তব্যরত অবস্থায় ওই পথ দিয়ে পার হইতে ছিলেন, যথায় আমার গুরু মহারাজ পাঠ কীর্তন করিতেছিলেন। শ্রীল গুরুদেবের পাঠ শ্রবণ করিয়া উনার বিশেষ আকর্ষণ হইল। তিনি ওই হরিকথা স্থানে গিয়া উপস্থিত হইলেন। হঠাৎ একজন পুলিশ অফিসার আসিয়া উপস্থিত হওয়ায় প্রথমে আমার গুরুদেব বিস্মিত হইলেন কিন্তু আসার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রশ্ন করিতে তিনি (সেই পুলিশ অফিসার) বলিলেন আমি আপনার হরিকথা শ্রবণ করিতে আসিয়াছি। দূর হইতে হরিকথা শ্রবণ করিয়া আমি আকৃষ্ট হইয়াছি এবং কিছু প্রশ্নও মনে উত্থিত হইয়াছে, তাই সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করিলেন-“আচ্ছা, সমস্ত মানব মাত্রেই কি সাধু হইতে পারে?” তিনি তখন বাংলা বুঝিতেন না, শ্রীল গুরুদেব হিন্দি ও ইংরেজিতে সারা রাত প্রায় হরিকথা প্রশ্ন উত্তর করিয়া ছিলেন। পরদিন যে যাহার কার্যের গমন করিয়া আবার সন্ধ্যায় উপস্থিত হইয়া ছিলেন। শ্রীল গুরুদেবের শ্রীমুখে প্রশ্নের মাধ্যমে হরিকথা শ্রবণ করিয়া বলিলেন প্রভু (অর্থাৎ আমার গুরু মহারাজ তখন শ্রীনরত্তমানন্দ ব্রহ্মচারী ছিলেন,)– “আমি এই অবস্থাই আপনার সঙ্গে আশ্রমে চলিয়া যাইব, আপনি আমায় উপদেশ করুন।” শ্রীগুরুদেব তখন বললেন-“আপনি একজন সাংসারিক কর্তব্যরত, হঠাৎ সংসার ত্যাগ করিয়া যাইবেন? ইহা কি করিয়া সম্ভব।” তিনি বলিলেন-“হ্যাঁ সম্ভব, কারণ আপনি বলিলেন মনুষ্য জন্মের একমাত্র কর্তব্য হরিসেবা? আমি ইহা শ্রবণ করিয়া যদি বুঝিয়া থাকি তবে তো সঙ্গে সঙ্গে তাহা কার্যে পরিণত করিতে হইবে।”

তৎপশ্চাৎ তিনি যাহা কথা তাহা কার্যে পরিণত করিলেন এবং শ্রীনবদ্বীপ-ধামে তেঘরি পাড়ায়স্থিত গৌড়ীয় বেদান্ত সমিতির মূলকেন্দ্র শ্রীদেবানন্দ গৌড়ীয় মঠে তে চলিয়া আসিয়া নিত্যলীলাপ্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ অষ্টোত্তরশত শ্রীশ্রীমদ্ ভক্তিপ্রজ্ঞান কেশব গোস্বামী মহারাজের শ্রীচরণ আশ্রয় লইয়া শ্রীগৌরনারায়ন ব্রহ্মচারী রূপে শ্রীগৌড়ীয় বেদান্ত সমিতির এক বিশিষ্ট সেবক রূপে পরিচিত হইলেন। দেখা যায় মহাপুরুষ মহাত্মাদের কি ভাবে শ্রবণ মাত্র ভগবত সেবায় নিযুক্ত হইয়া জগতে এক মহান আদর্শ স্থাপন করিলেন। তিনি বিবাহিত ছিলেন, স্ত্রী সন্তানাদি ছিল, তথাপি তাহাদের ত্যাগ করিয়া চিরজীবনের মত চলিয়া যাইবেন তাহার নিমিত্ত একবিন্দুও বিচলিত বোধ করেন নাই। ঐ প্রকার মহাত্মা পুরুষের আদর্শ দৃষ্টান্ত বিশ্বে কলিহত মায়া মোহিত নানা দুঃখে লাঞ্ছিত জীবগনের নিশ্চিন্ত ভরসার স্থল।

শ্রীল নারায়ন গোস্বামী মহারাজ ছিলেন বজ্রাদপি কঠোর আর কুসুমের মতো কোমল হৃদয়। আদর্শহীন বিমুখ ব্যক্তির প্রতি বজ্রের ন্যায় কঠোর ছিলেন, আর যাহারা আদর্শবান ভাগবত বিশ্বাসী শ্রদ্ধালু ব্যক্তি বা হরিসেবারত জনের প্রতি পুষ্পের ন্যায় কোমল স্নেহ পরায়ন ছিলেন। এই প্রকার মহাত্মা মহাপুরুষের চিরদিন সঙ্গ ও সেবা প্রাপ্ত হইবার বাঞ্ছা সকলের হওয়া উচিৎ বা আমাদের এই ইচ্ছা হয়। কিন্তু দুর্দ্দৈব আমরা তাহাদের সঙ্গঁ হইতে বঞ্চিত হই, তথাপি ভরসা আমাদের যাহারা ইনাদের কিঞ্চিত সঙ্গঁ প্রাপ্ত হয়েছেন তাহারা অবশ্য সার্থক জন্ম হইয়াছেন। শ্রীমদ্ভাগবতে বলিয়াছেন- ওই মহাত্মাগন নিজেরা ভয়ঙ্কর দুঃখপূর্ন উত্তাল ভবসমুদ্র নিজেরা উত্তীর্ণ হইয়া ভাগবত-পাদপদ্মরূপ, গুরু-ভাগবত-পরম্পরারূপ, হরি-পাদপদ্মরূপ তরণী রাখিয়া তাঁহারা এই জগৎ হইতে চলিয়া যান । ঐ প্রকার সদানুগ্রহ মহত্মাগণের একজন শ্রীল নারায়ন গোস্বামী মহারাজ অতি আদর্শবান মহাত্মা ছিলেন।

তিনি শেষ বয়সে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গৌরবাণী প্রচার ও হরিকীর্তনে কলিযুগহত দেশের জনগণের উদ্ধার মানসে পরিশ্রম করিয়াছেন। যদ্যপি তিনি দীর্ঘ পরমায়ু প্রাপ্ত হইয়া জনগণের প্রভূত মঙ্গল সাধন ঊননব্বই বর্ষ পর্যন্ত অক্লান্ত ভাবে চেষ্টা করিয়াছেন। শেষে কিঞ্চিৎ রুগ্নতার অভিনয় করিয়া আমাদের মত দুর্ভাগাদের বঞ্চনা করিয়াছেন। কিন্তু তাঁর প্রভু শ্রীগৌরসুন্দর তিনি আমাদের তাঁর কৃপা হইতে বঞ্চনা করিবেন না। তাঁর এই শতবর্ষপূর্তি মহা-মহোৎসবে আমাদের মত দুর্ভাগাদের নিমিত্ত ভক্তিশূন্য অবস্থাতে তাঁর প্রাণপ্রিয় প্রভু শ্রীগৌরসুন্দরের শ্রীচরণে কিঞ্চিৎ নিবেদন করেন, তবে অবশ্য শ্রী গৌরসুন্দর ও শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু তাঁদের বরদ হস্ত প্রসারণ করিয়া এই প্রেম ভক্তিহীন অতি দরিদ্র জীবকে সম্পদবান করিতে সচেষ্ট হইবেন। আমার এই রোগগ্রস্ত অষ্টআশি বর্ষ বয়ক্রমে কম্পিত হস্তে শ্রীল মহারাজের চরণে সেবার কিছু চেষ্টা করিলাম, তিনি প্রসন্ন হউন। ইতি,

দিনাতিদীন বৈষ্ণব-দাস

শ্রীভক্তিজীবন আচার্য্য
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মঠ

মিঠাপুকুর রোড
বর্ধমান, পঃ বঙ্গ