Sripad B.V. Avadhuta Maharaja
India, Godruma

আমার সন্ন্যাস গুরুপাদপদ্ম নিত্যলীলাপ্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজক আচার্য্য অষ্টোত্তরশত শ্রীল ভক্তিবেদান্ত নারায়ন গোস্বামী মহারাজের আবির্ভাব শতবার্ষিক উপলক্ষে বাণী পুষ্পাঞ্জলী-
আমি উপলব্ধি করিয়াছি যে জীবের মুখ্য প্রয়োজন লাভের একমাত্র উপায় শ্রীগুরু-বৈষ্ণব কৃপা। শ্রীগুরু-বৈষ্ণবের কৃপার ফলেই জীবের পক্ষে সৎ অনুগ্রহ শ্রীভগবানের কৃপা-কটাক্ষ লাভ হয়। বৈষ্ণবের কৃপা লাভ করিবার উপায় সম্বন্ধে মহাজনগণ এইরূপ বলিয়াছেন-
আদর করিবে যবে।
বৈষ্ণবের কৃপা, যাহে সর্ব্বসিদ্ধি,
অবশ্য পাইবে তবে॥”
বৈষ্ণবের প্রতি ব্যবহার যথাযথ রূপে সম্পন্ন হইলেই জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত বৈষ্ণব অপরাধ হইতে নিষ্কৃতি লাভ হয় ও শুদ্ধ কৃষ্ণনামে রুচি আসে। নিষ্কপট শরণাগত ব্যক্তির নিকটই বৈষ্ণবের গুন সকল যথার্থ স্বরূপে প্রকাশিত হয়। মহাজনগণ বলিয়া থাকেন- “বৈষ্ণব চিনিবারে নাই দেবেরও শকতি।” অসহায় দুর্ব্বল মানব অজ্ঞ ও মূর্খ। আমরা বৈষ্ণব কি প্রকারে চিনিব? বৈষ্ণবের বৈষ্ণবতাই কি প্রকারে বুঝিব। শরণাগত কেই গুরু বৈষ্ণবগণ কৃপা করিয়া থাকেন। ভক্তিবিনোদ ঠাকুর লিখেছেন- “শিখায়ে শরণাগতি ভকতের প্রাণ।” যেজন বৈষ্ণব চিনিয়া লইয়া তাঁহার প্রতি মমতা স্থাপন করেন, তিনি বৈষ্ণবের কৃপা লাভ করিয়া থাকেন। বৈষ্ণবের সহিত আমাদের সম্বন্ধ নিত্য, তাহার সহিত নতুন করিয়া সম্বন্ধ স্থাপন করিতে হয় না। গুরু বৈষ্ণবগণ আমাদের সম্বন্ধ জ্ঞান প্রদাতা।
বৈষ্ণবের আবির্ভাব সেই হেন পবিত্র।”
পূজ্যপাদ ত্রিদন্ডীস্বামী শ্রীল ভক্তিবেদান্ত নারায়ন গোস্বামী মহারাজ দেশ ও বিদেশে শ্রীরূপ গোস্বামী ও শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামীর কথা প্রচার করিয়াছেন। মহারাজ রুপানুগ আচার্য্য ভাস্কর বৃন্দাবনের প্রসিদ্ধ ছয় গোস্বামী শীর্ষস্থানীয় শ্রীরূপ-সনাতন’এর বিচার ও সিদ্ধান্তে সুপন্ডিত ছিলেন। তিনি সারাজীবন নির্ভেদ ব্রহ্মনুসন্ধানের প্রতিকূলে যুদ্ধ করিয়া শক্তি ও শক্তিমানের অচিন্ত্য ভেদাভেদ বিচারে চিদ ও বৈচিত্র্যের সমাবেশ পতাকা হস্তে ধারণ করিয়া শ্রীভগবান ও তদীয় নামের অভিন্নত্ব স্থাপন করিয়া প্রেমভক্তির সর্বশ্রেষ্ঠতা স্থাপন করিয়াছেন। তিনি উপনিষদ ও বেদান্তের চরম সিদ্ধান্ত শ্রীমদ্ভাগবতামৃতের নিগম কল্পতরুর গলিত ফলের শুক-মুখাদমৃতের দ্রব সংযুক্ত রসের পরিবেশন করিয়াছিলেন। তিনি বৃন্দাবনের ভাগবত সম্মেলন দ্বারা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের বিপুল প্রচার করিয়াছিলেন। তিনি বৃন্দাবনের বহু লুপ্ত স্থান উদ্ধার করিয়াছেন ও সমস্ত বৃন্দাবনবাসীগন শ্রীল মহারাজের মধুর ব্যবহারে মুগ্ধ ছিলেন। তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল যে, সমস্ত গৌড়ীয় মঠের সেবকগণ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সেবার উদ্দেশ্যে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে একত্রিত হইয়া হরিনাম সংকীর্তন ভক্তি ধর্ম প্রচার। মহাপ্রভুর কথিত-
তাহা বীনা রত্ন-শূন্যা মেদিনী।”
এই বচন অনুসারে আজ আমাদের কাছে মনে হয় রত্ন শুন্যা হল মেদিনী। শ্রীল মহারাজের শ্রেষ্ঠ অবদান হল গোস্বামীগণের রসতত্ত্বের গ্রন্থগুলি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ।
পরিশেষে আমার সন্ন্যাস গুরুপাদপদ্মে সকাতর বিজ্ঞপ্তি জানাইতেছি যে আমাকে কৃপা করিয়া নাম ভজনে অনুরাগ প্রদান করুন যাহাতে সেই রুপানুগ ভক্তিতে অধিকার লাভ করিয়া ভজন রাজ্যের গুঢ় রহস্যে প্রবেশ করতে পারি।

সুরভীকুঞ্জ মঠ, গোদ্রুমদ্বীপ
ভক্তিবেদান্ত অবদূত মহারাজ
স্বরূপগঞ্জ, নবদ্বীপ, নদীয়া।