Śrī Śrīmad Bhaktivedānta Nārāyana Gosvāmī Mahāraja  •  100th Anniversary

Sripad B.S. Sannyasi Maharaja

India, Mayapur

Sripad Bhakti Svarupa Sannyasi Maharaja with Srila Gurudeva
Sripad Bhakti Svarupa Sannyasi Maharaja with Srila Gurudeva

শতবর্ষে ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিবেদান্ত নারায়ণ গোস্বামী মহারাজ

মায়ামুক্ত জীবের লক্ষণ সম্বন্ধে ছান্দোগ্যে (৮।৭।১) উল্লেখ আছে—

“আত্মাপহতপাप्मा বিজরো বিমৃত্যুর্বিশোকো বিজিঘৎসোহপিপাসঃ সত্যকামঃ সত্যসংকল্পঃ সোহম্বেষ্টব্যঃ”

মায়ার অবিদ্যাদি পাপবৃত্তি—সম্বন্ধ শূন্য জরাধর্ম-রহিত অর্থাৎ নিত্যনূতন, মৃত্যু শূন্য, শোকাতীত, প্রাকৃত ক্ষুধা বা পিপাসা রহিত, অপ্রাকৃত ও নির্দোষ কামনাযুক্ত, যাঁহার বাসনামাত্র সিদ্ধ হয়, সে আত্মাকে অনুসন্ধান করা কর্ত্তব্য। এই সকল গুণে বিভূষিত ছিলেন আমাদের অভিন্ন গুরুপাদপদ্ম শ্রীল ভক্তিবেদান্ত নারায়ণ গোস্বামী মহারাজ।

যেই জনের যেইরূপ সঙ্গ, তাহার সেইরূপ মণি স্পর্শের ন্যায় গুণ সকল প্রাপ্তি হইয়া থাকে। অতএব মুক্ত পুরুষ অর্থাৎ উত্তম সাধুর সঙ্গ করিলে মায়াতীত শুদ্ধ সাধু হওয়া যায়। আমি তাঁহার সহিত যেটুকু সঙ্গ এবং তাঁহার কৃপা আশীর্বাদ ও ভালবাসা পাইয়াছি তাহা স্মরণীয় হইয়া থাকিবে। তিনি আমার গুরুপাদপদ্ম শ্রীল যতি গোস্বামী মহারাজের অন্তরঙ্গ নিজজন ছিলেন, আমি বহুবার দেখিয়াছি পরস্পরের মধ্যে সখ্যভাবে ভগবৎ কথা আলোচনা এবং প্রীতি, সৌহার্দ বন্ধুত্বও অত্যন্ত ছিল।

পৃথিবী পর্যন্ত যত আছে দেশ গ্রাম।
সর্বত্র সঞ্চার হইবেক মোর নাম॥
–(চৈঃ ভাঃ আঃ ৪।১২৬)

এইরূপ ভগবৎ বাণী সার্থক করিবার জন্য ভগবানের নিজজন জগৎগুরু প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর এই জগতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন। তাঁহার নিজজন সহ গুরু পরম্পরা ক্রমে আবির্ভূত হইয়া অপসিদ্ধান্ত সকলকে ধ্বংস করিয়া সুসিদ্ধান্ত অর্থাৎ ভগবৎ প্রেমাস্বাদনের পথ নিজ আচরণ দ্বারা জগৎজীবকে শিক্ষা দিয়াছেন, সেই প্রভূপাদের অন্তরঙ্গ শ্রীল ভক্তিপ্রজ্ঞান কেশব গোস্বামী মহারাজের চরণাশ্রিত ছিলেন শ্রীল ভক্তিবেদান্ত নারায়ণ গোস্বামী মহারাজ।

বৈষ্ণবের ২৬ টি লক্ষণ-

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার, সম।
নির্দ্দোষ, বদান্য, মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন॥
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈক-শরণ।
অকাম, নিরীহ, স্থির, বিজিত-ষড়্‌গুণ॥
–(চৈঃ চঃ)

এই সকল গুণগুলি তাঁহার মধ্যে বিরাজিত ছিল। তিনি জগৎ জীবের নিত্য কল্যাণের জন্য তাঁহার গুরুপাদপদ্ম শ্রীল ভক্তি প্রজ্ঞান কেশব গোস্বামী মহারাজের সহিত ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে শ্রীমন্মহাপ্রভুর কথা, জীবের আত্ম কল্যাণের কথা প্রচার করিয়াছেন। তিনি নিজেও সারা বিশ্বে বহুবার পরিক্রমা করিয়া শ্রীরূপানুগ তথা শ্রীল ভক্তিবিনোদ ধারা অর্থাৎ শুদ্ধভক্তির মাধ্যমে কৃষ্ণপ্রেম আস্বাদনের পথ প্রদর্শন করিয়াছেন। তিনি তাঁহার গুরুদেবের আদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ পূর্বক ভগবৎ সেবা বা মঠের সেবায় আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন।

জগৎগুর প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর বলিয়াছেন-“সকলের সহিত বন্ধুত্ব অর্থাৎ সকল বৈষ্ণবের মন যোগাইয়া হরিসেবায় নিযুক্ত থাকা কীর্ত্তন যজ্ঞের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের অপরিহার্য্য সদ্‌গুণ।”

শ্রীল মহারাজের মন ছিল নির্মল, সকলকে আদরের সাহিত কাছে টানিয়া লেইতেন, সবাইকে ভালোবাসার দ্বারা ভগবৎ সেবায় নিযুক্ত করিতেন, তিনি সদ্‌গুরুরূপে নিজ আচরণ দ্বারা ভক্তগণকে শিক্ষা দান করিয়াছেন। তাঁহার শতবর্ষ আবির্ভাব তিথিতে তাঁহার চরণে শত কোটি প্রণাম জানাই। আমরা যেন নিত্যকাল সাধুগুরু বৈষ্ণবগণের অনুগত হইয়া শ্রীগৌরহরি ও শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দের সুখ বিধান করিতে পারি, তাঁহার শ্রীচরণে এই প্রার্থনা জানাই, তিনি জয়যুক্ত হউন।

-শ্রীল ভক্তিস্বরূপ সন্ন্যাসী মহারাজ

(মঠাচার্য্য ও সাধারণ সম্পাদক,
আকর মঠরাজ মায়াপুর শ্রীচৈতন্য মঠ,
শ্রীমায়াপুর, নদীয়া)